এম.এ. লতিফ, আদালত প্রতিবেদক: [২] মঙ্গলবার  ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।  

[৩] দণ্ডের পাশাপাশি তানভীর মাহমুদ ও জেসমিন ইসলামকে ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত।

[৪] যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। 

[৫] যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

[৬] সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

[৭] এ ছাড়া সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকারকে এক ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

[৮] গত ২৮ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেছিলেন। তবে ওইদিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে আরও দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে গত ১২ মার্চ আদালত দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

[৯] মামলার সূত্রে জানা যায়, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস নামে ভুয়া কোম্পানির হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

[১০] ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুদক। 

[১১] সংস্থাটির সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান মামলার তদন্তকাজ শেষ করেন বলে জানা গেছে। 

[১২] ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ তৎকালীন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।

এম.এ. লতিফ, আদালত প্রতিবেদক: [২] মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা মামলায় সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোঃ জামাল উদ্দিন সরকারকে পেনাল কোডের ৪০৯/১০৯ ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং পেনাল কোডের ৪২০/১০৯ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। রায় ঘোষণার আগে জামাল উদ্দিন যথারীতি আদালতে হাজিরা জমা দেন কিন্ত রায় ঘোষণার সময় তিনি এজলাসে উপস্থিত না হয়ে পালিয়ে যান।

[৩] আদালতের পেশকার রাজিব দে ‘আমাদের নতুন সময়’কে বিষয়টি জানান।

[৪] রায়ে বিচারক জামালের বিষয় বলেন,  তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী জামাল উদ্দিন সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স নং-৪৯৭, যা ২০১১ সালের ৮ আগস্ট দাখিল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে কোনো মিলসের অস্তিত্ব না থাকা সত্তেও তিনি ওই মিলসের নামে ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ফলে সোনালী ব্যাংক, শেরাটন শাখায় ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ট্রেড লাইসেন্সে উল্লিখিত ঠিকানায় তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এভাবে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুকারী চেয়ারম্যান হাজী মো. জামাল উদ্দিন সরকার বর্ণিত অর্থ আত্মসাতে অন্যান্য আসামিদের সহায়তা করেন।

[৫] রায়ের পর্যাবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির মামলার ঘটনায় দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিষ্ময়ক ঘটনা। যে অপরাধী দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলা মনে করে- তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত মর্মে আদালত মন্তব্য করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বিধায় তাদের প্রাপ্ত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হোল।

[৬] রায়ে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী এবং গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি উভয়ের ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ লাখ টাকা করে অর্থ দণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

[৭] যাবজ্জীবন দণ্ড প্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহম্মেদ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগণ গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি আব্দুল মালেক এবং টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান। যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

[৮] সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ সাত কর্মকর্তা প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সাবেক জিএম ননী গোপাল নাথ, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক জিএম মীর মহিদুর রহমান, ডিএমডি মাইনুল হক, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হাসান খান ও সোনালী ব্যাংক ধানমণ্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা মেরীকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর প্রতারণার আরেক ধারায় তাদের ৭ বছর কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

[৯] গত ২৮ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ ঠিক করেছিলেন। তবে ওইদিন রায় থেকে মামলাটি উত্তোলন করে আরও দুই জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে গত ১২ মার্চ আদালত দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

[১০] মামলার সূত্রে জানা যায়, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস নামে ভুয়া কোম্পানির হিসাবে সুতা রপ্তানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

[১১] ৪ অক্টোবর, ২০১২ আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করে দুদক। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত মামলাটি দায়ের করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান মামলার তদন্তকাজ শেষ করেন বলে জানা গেছে। ২৭ মার্চ, ২০১৬ তৎকালীন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন। সম্পাদনা : কামরুজ্জামান